আব্দুর রহমান: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেন এক ফিনিক্স পাখি। ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই বাংলার মানুষের কল্যাণে। কণ্টকাকীর্ণ এক দীর্ঘ পথ হেঁটে, সহস্র বাধা মাড়িয়ে তিনি আজকের শেখ হাসিনা। তার সুদক্ষ ও আন্তরিক নেতৃত্বের কারণে এ দেশের মানুষ একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্টম্ন দেখে। কেননা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তথা ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্টেম্নর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন। এ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এক নতুন লড়াইয়ে আজ তিনি অবতীর্ণ। তারই সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।
পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে রাজনীতি তার রক্তে প্রবহমান। পারিবারিক আবহের কারণেই পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের নানা কর্মসূচি নিয়ে আলাপচারিতা ও কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ তার মধ্যে একটি রাজনীতি সচেতন মনন তৈরি হয়ে যায়। এরই প্রভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনার তাড়না তার মননে গেঁথে গিয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই চেতনা ও তাড়না থেকে স্বাভাবিক কারণেই, স্কুলজীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং ছাত্রজীবন থেকেই সব গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ওই কলেজের ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রামের তিনি নিবিড় ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী। মুজিবকন্যা হওয়ার কারণেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বহু ঘাত-প্রতিঘাত ও সংকটময় পরিস্থিতি তাকে পার করতে হয়েছে।
সৌভাগ্যবশত পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন এবং বেঁচে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সব সদস্যকে হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে দীর্ঘ ছয় বছর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতেই সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং ১৭ মে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
আওয়ামী লীগের সেদিনের এই সিদ্ধান্তটি পরে বাংলাদেশের ভাগ্যলিপিকেই বদলে দিয়েছে। একটি অন্ধকার সময় পার করে বস্তুত শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভাবনা ও স্বপ্টেম্নর পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। নব্বইয়ের স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে সামরিক সরকারকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার-ব্যবস্থা প্রবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রাখেন।
১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র ও বাধা উপেক্ষা করে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলমান। এই কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার অঙ্গীকার পূরণে তিনি সবসময়ই থেকেছেন অটল ও আপসহীন।
শেখ হাসিনার ওপর ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে সরাসরি রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে যে ন্যক্কারজনক ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, এ রকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দুরন্ত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ অবকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক সাফল্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন, হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু নিয়ন্ত্রণ, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন, সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার অতুলনীয় সাফল্য একজন সফল নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এর সফল বাস্তবায়ন শেখ হাসিনা সরকারের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। এ ছাড়া রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বহুমুখী প্রকল্পসহ তার সরকারের গৃহীত দশটি মেগা-প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পথে। সেগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও অনেক বেশি গতি সঞ্চার হবে। করোনার প্রভাবে যখন সারাবিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে, তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশ তখনও উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করে তিনি বাংলাদেশকে প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের গৌরব এনে দিয়েছেন।
করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিশ্বের সব দেশ যখন মরিয়া, প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহে সবচেয়ে সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি। করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ এর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে। মুজিববর্ষে তিনি ভূমিহীন ও হতদরিদ্র মানুষদের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে দুই লাখ ১৩ হাজার ২২৭টি পরিবারকে ঘর উপহার দিয়ে পুনর্বাসন করেছেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের বেশ কিছু খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পুরস্কার প্রদান করেছে।
তার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করার পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে তার প্রতি আমার আনত শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তার সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের আরও সুন্দর ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার জন্য বড় বেশি প্রয়োজন। জয়তু বঙ্গবন্ধুকন্যা।
লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ